,

হত্যার জেরে চলছে ভাংচুর-লুটপাটের মহোৎসব!

জেলা প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া: প্রতিপক্ষের হামলায় আওয়ামী লীগ নেতা সিদ্দিকুর রহমান হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলছে হামলা, ভাংচুর-লুটপাটের মহোৎসব। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে হত্যা পরবর্তী ভাংচুর-লুটপাট, নারী নির্যাতন এ যেন নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে এই গ্রামে। এমনই একটি গ্রামের নাম ‘চাঁদগ্রাম’।

বলছিলাম কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামের কথা। সরেজমিনে ঘুরে সোমবার দুপুরে দাঙ্গা কবলিত চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের মধ্যে পাড়া গ্রামে ভয়ঙ্কর এসব চিত্র দেখা গেছে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকালে আধিপত্ত্য বিস্তার ও ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলমান বিরোধের জের ধরে গুলি করে সিদ্দিকুর রহমান (৫০) নামে এক আওয়ামীলীগ নেতাকে খুন করে প্রতিপক্ষের লোকজন। খুনের ঘটনার পর তা মোড় নেয় স্থানীয় জাসদ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে।
নিহত সিদ্দিকুর রহমান একই এলাকার মৃত ওমর আলীর ছেলে। তিনি চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ছিলেন। ওই দিন এ ঘটনায় তিনজন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে আরও ৬জন। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনায় নিহত আওয়ামী লীগ নেতা সিদ্দিকুর রহমানের ছোট ভাই এনামুল হক মন্ডল বাদী হয়ে ভেড়ামারা থানায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম স্বপন এবং তাঁরই ছোট ভাই চাঁদগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন জাসদের সভাপতি আব্দুল হাফিজ তপনসহ ২০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনের নামে মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা এখন কারাগারে রয়েছেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, একই এলাকার সোনা মালিথার ছেলে মিন্টু মালিথা (২৮), একই গ্রামের নজরুল মালিথার ছেলে রনি মালিথা (২৮), আব্দুল হামিদের ছেলে জনি (২৮), ড্যানি (২৫) এবং জফো প্রামাণিকের ছেলে জারমান (৪০)। বাঁকি আসামিরা এখনও পলাতক রয়েছে।
হত্যা পরবর্তী গ্রেপ্তার আতঙ্ক গ্রামটিতে পুরুষশূণ্য থাকায় বাড়ি-ঘর ভাংচুর, নারী নির্যাতন এ যেন নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ৬০ বছরের বংশীয় দ্বন্দ্ব। এখানকার দুটি দলের সংঘাত আর হানাহানি চলছেই। ধ্বংস হচ্ছে বাড়িঘর আর লুটপাট হচ্ছে অসহায় মানুষের সহায় সম্বল। প্রতিপক্ষের হামলা ও মামলার ভয়ে পুরুষরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। ফলে গ্রামটি রয়েছে পুরুষশূন্য। এছাড়াও সবচেয়ে বড় যে ক্ষতি হচ্ছে এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া। দিনে-দুপুরে চলছে লুটপাটও। গ্রামটিতে এখনও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যেকোনো সময়ে সংগঠিত হতে পারে হত্যার মতো ঘটনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভুক্তভোগী জানান, ঘটনায় জড়িত অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। আবার যাঁরা জড়িত নন, এমন অনেকেই গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বাড়ি-ঘর লুটপাট করা হচ্ছে। হত্যার ঘটনা ও মামলার পর থেকেই পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে ৪০থেকে ৫০টি পরিবার। ফলে এলাকার একদল দুর্বৃত্তরা বাড়ি-ঘরে লুটপাট শুরু করেছে। লুটপাটে জড়িত দুষ্কৃতকারীরা সাধারণ ও নিরীহ মানুষের বাড়িতেও লুটপাট চালাচ্ছেন। এতে গরু, ছাগল, ফ্রিজ, টিভি, এমনকি জামাকাপড়সহ সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যাচ্ছে তারা। শুধু তাই নয়, খেতের ফসল নষ্ট করা হচ্ছে। লুটপাট ঠেকাতে দ্রুত প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
চাঁদগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বুলবুল কবির বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকে খুন করা হয়েছে। পরদিনই অনেকেই তাদের জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লুটপাটের কথা ছড়িয়ে আসামির অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
চাঁদগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাফিজ তপন বলেন, এ হত্যাকান্ডের ঘটনা বংশীয় দ্বন্দ্ব প্রায় ৬০ বছরের। মাঝে মাঝেই এদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও হামলার ঘটনা ঘটে আসছে। এখানে আমিসহ আমার ভাইকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
ভেড়ামারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, এমন কয়েকটি ঘটনার অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, ওই এলাকায় সংঘাত এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর